ঢাকা , বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ , ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সহযোগিতা করছে না, তারাই আবারো ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায় - সাবেক এমপি ডা. তাহের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-০১ ২২:৪১:৫১
যারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সহযোগিতা করছে না, তারাই আবারো ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায় - সাবেক এমপি ডা. তাহের যারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সহযোগিতা করছে না, তারাই আবারো ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায় - সাবেক এমপি ডা. তাহের

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা আজ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে না, তারাই আবারো ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্ল্যাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতির কোন বিকল্প নাই’। পিআর পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতির কোন সুযোগ থাকবে না বলেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে ভয় পায়। সেজন্য তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে না। যারা নির্বাচনের আগেই সংসদে ২৮০ আসন পাবে দাবি করে নিজেরা একক সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়; তারাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি করবে। তারা মূলত হাসিনা মার্কা যেনতেন একটি নির্বাচন চায়।

 

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে, বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে উল্লেখ করে ডা. তাহের বলেন, জনগণের প্রত্যাশিত সরকার গঠন না হলে আবারো ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। আবারো মানুষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারাবে। রাষ্ট্র কর্তৃক জুলুমের শিকার হবে। 

 

মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে "জুলাই - আগস্ট" গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের স্মরণে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান পূর্বক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
 

প্রধান অতিথি ডা. তাহের বলেন, চব্বিশের স্বাধীনতার মাধ্যমে মানুষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লাভ করেছে।  ১৯৪৭ সালে আমরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি, এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিগত ৫৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ গ্রহন করতে পারেনি। বরং মানুষ শোষণের শিকার হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে, রাষ্ট্র কর্তৃক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

 

যার কারণে সবশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জুলুমের হাত থেকে এই জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে। ২৪ এর স্বাধীনতা আর কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেওয়া হবে না। ছাত্র-জনতার অর্জিত নতুন বাংলাদেশে মানুষ এখন মৌলিক পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের জন্য সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সরকার কয়েকটি সংষ্কার কমিশন গঠন করেছে। ঐক্যমত কমিশন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ৩২টি রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে তাদের মতামত গ্রহন করছে। এনডিএম, বিএনপি সহ ৩টি দল ব্যতিত সব দল শর্তহীন প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি কেউ থাকতে পারবে না প্রস্তাবের পক্ষে সমথর্ন জানিয়েছে।

 

অবশ্য বিএনপি পরবর্তী শর্ত দিয়েছে তাদের অন্য সব প্রস্তাব মেনে নিলে তারাও প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি কেউ থাকতে পারবে না প্রস্তাবের পক্ষে সমথর্ন দিবে। তা-ও দুই মেয়াদে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে! এই শর্তে বিএনপি প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, কারো উদ্দেশ্য যদি খারাপ হয় তাহলে মহৎ উদ্দেশ্যে তিনি সমর্থন জানান না, জানাতে পারে না। যারা আজ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে না, তারা মূলত আবারো ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। দেশের মানুষ অতীতের চেয়ে বহুগুণ বেশি সচেতন উল্লেখ করে তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে নিজের ও দলের স্বার্থ পরিহার করে দেশ ও জাতির প্রত্যাশিত রাজনীতি করার আহ্বান জানান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান ডা. সৈয়দ আব্দুল্ল্যাহ মোহাম্মদ তাহের।  

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত দোয়া অনুষ্ঠান পূর্বক আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মহানগরীর নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, পটুয়াখালী - ২ (বাউফল) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঠাকুরগাঁও -১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা-৯ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কবির আহমদ, ঢাকা-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, ঢাকা-৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এফবিসিসিআই'র সাবেক পরিচালক হাজী হাফেজ এনায়েত উল্লাহ, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খান।

 

বক্তারা সকলেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে সে সময়কার স্মৃতিচারণ করেন। এসময় তারা বলেন, ৩৬ দিনের সংগ্রামে ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীন করতে না পারলে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জিত হতো না।

 

আজকে যারা মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলছে, যারা প্রস্রাব করে দিলে জুলাইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ছাত্ররা ভেসে যাবে বলে হেয় প্রতিপন্ন করছে তারা বিগত ১৭ বছর কোথায় ছিল প্রশ্ন রেখে বক্তারা বলেন, অথচ ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী লীগের পরিচালিত নির্মম গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি না জানিয়ে তারা শুধু নির্বাচন, নির্বাচন তসবিহ পাঠ করছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের মতামত নিয়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। সরকার সংস্কার ও গণহত্যার বিচার সম্পন্ন না করে নির্বাচন করলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। তারা, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি সরকারের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং পরে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

 

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষী এদেশের মানুষ কোন স্বৈরাচার মেনে নেয়নি। যতবারই স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে মানুষ ততবারই তাদের পতন ঘটিয়েছে। তবে পৃথিবীর ইতিহাস নিকৃষ্টতম পতন হয়েছে স্বৈরাচারী হাসিনার। তার শুধু পতনই হয়নি তাকে দলবল নিয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে জাতি ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। যাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে জাতি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে সেই ছাত্র-জনতা আমাদের জাতীয় বীর, জাতীয় সম্পদ। জাতীয় বীরদের চিরদিন জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। যারা শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাদেরকে এই জাতি ক্ষমা করবে না। তাদেরকেও আওয়ামী লীগের মত পরিণতি বরণ করতে হবে। তাই আওয়ামী লীগের পথে হাঁটা বন্ধ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কল্যাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

 

সভা শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সহ ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশের জন্য আত্মদানকারী সকল বীরের জন্য এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়।

 

 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ